অশ্বগন্ধার বহুমুখী গুণ ও অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন
অশ্বগন্ধা বা উইন্টারচেরী ( Winter cherry) আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নয়নমণি। ৩০০০ বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ওইদেনিয়া সোমনিফেরা (Withania Somnifera)। সোমনিফেরা একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ ঘুমের উপর প্রভাব বিস্তারকারী। অসাধারণ কার্যকারিতার জন্য অশ্বগন্ধাকে ইন্ডিয়ান জিনসেং হিসেবেও অভিহিত করা হয়। নিয়মিত খেলে অশ্ব বা ঘোড়ার মতো শক্তি বৃদ্ধি হয়।
অশ্বগন্ধা হলো মূলত চিরহরিৎ জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ। অশ্বগন্ধার উপকারিতা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া, নেপাল, ভূটান, পাকিস্থান সহ দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক দেশে অশ্বগন্ধা জন্মায়। এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে এটার সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বর্তমানে অশ্বগন্ধার গাছগুলোকে পাওয়া যায়।
অশ্বগন্ধার পুষ্টিগুণ
অশ্বগন্ধার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ টেস্টোস্টেরণ বৃদ্ধিকারী উপাদান। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি সহ আরো অনেক প্রকার ভিটামিন, যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। ভিটামিন সহ ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। শরীরের জন্য উপকারি আরো অনেক রকম পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন রয়েছে অশ্বগন্ধাতে।
শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য আমাদের বাংলাদেশেও অনেক মানুষ অশ্বগন্ধা ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও এর পুষ্টিগুণের ভিত্তিতে ভেষজ ঔষধালয়ে ঔষধ বানিয়ে অশ্বগন্ধা বিক্রি করে থাকে। নানাবিধ শারীরিক উপকারিতায় ভরপুর থাকায় দিন দিন এটি সবার নিকট পরিচিত হচ্ছে পাশাপাশি সুস্থ্যতার জন্য এটির ব্যবহারও বাড়ছে।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিশ্বস্ত সূত্র ইত্যাদি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। আপনারা চাইলে এগুলো যাচাই করে দেখতে পারেন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি জিনিউজ, indiatimes, herbaltress ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে। চলুন দেখে নেই কি কি উপকারিতা আছে-
১. রাতে ঘুমানোর আগে অশ্বগন্ধা গুড়ার সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়। অনিদ্রায় ভুগলে অশ্বগন্ধা কার্যকরী ঔষুধ হিসেবে কাজ করে।
২. অশ্বগন্ধা একটি অ্যাডাপটোজেন, যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
৩. অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাসে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান থাকে। ডায়বেটিস রোগীদের শরীরের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এটি সাহায্য করে।
৪. অশ্বগন্ধায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর উপাদান থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। অনেক রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা করে।
৫. অশ্বগন্ধা গাছের রসে শক্তিবর্ধক রয়েছে। এটি শারীরিক গঠনের উন্নতি ঘটায় ও পেশী শক্তিশালী করে। এটি পুরুষের শুক্রানু বাড়াতে বেশ কার্যকর। এর মূল ও পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে। দুধ ও ঘিয়ের সাথে এর পাতা ফুটিয়ে খেলে শরীরের শক্তি সঞ্চার করে। মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে মনোযোগ বাড়ায়। অশ্বগন্ধা মাথা ঝিমঝিম ও অবসাদ কাটায়।
৬. আমরা জানি, এখনকার সময়ে খাবার দাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হৃদপিন্ডের অনেক সমস্যা দেখা যায়। অশ্বগন্ধা এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৭. সাপের কামড়ে বিষনাশক হিসেবে এর ব্যবহার আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। ু
৮. ঘন, কালো, উজ্জ্বল চুলের জন্য অশ্বগন্ধা উপকারি।
৯. মহিলাদের ঋতুচক্র স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা।
১০. যেহেতু এটি দুশ্চিন্তা কমায়, তাই অনিদ্রা রোগে যারা ভুগছেন তাদের ঘুম ভালো করতে সাহায্য করবে।
অনেক ক্ষেত্রে এটি শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তাই, উচ্চতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তবে, এমন না যে, বাংলাদেশী কারো উচ্চতা ইউরোপীয়ানদের মতো হয়ে যাবে।
অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন?
নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্যে আমরা খেয়ে থাকি অশ্বগন্ধা। কিন্তু আমাদের সঠিক উপায়ে অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে, চলুন তাহলে আপনাদের সুবিধার্থে জেনে নেই, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেঃ
আজকাল প্রায়শই নানান ধরণের শারীরিক সমস্যায় আমরা ব্যবহার করে থাকি অশ্বগন্ধা। বাজারে আমরা অশ্বগন্ধাকে সাধারণ ট্যাবলেট, পাউডার কিংবা মূল হিসেবে কিনে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কিভাবে খাবেন চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
আপনি যদি অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট খেতে চান তাহলে, সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি রাতে একটি করে ট্যাবলেট খেতে হবে। এতে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত সমস্যায় উপকার পাবেন।
আপনি যদি অশ্বগন্ধা পাউডার হিসেবে খেতে চান তাহলে, প্রতি রাতে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে আপনি তিন থেকে চার চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে খাবেন। আপনি চাইলে এই মিশ্রণটির সাথে চিনি কিংবা মধু মিশিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান পাবেন।
এছাড়াও, আপনি যদি অশ্বগন্ধার মূল খেতে চান সেক্ষেত্রে মূলত ভালোভাবে পরিষ্কার করে তা সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করা পানি আপনাকে ফুটানো হলে ছেঁকে নিতে হবে। পানি ছেকে নিলে আপনি সেই পানিটুকু খেয়ে নিবেন তাহলে আপনি আপনার সমস্যাটির খুব দ্রুত আকারে সমাধান পেয়ে যাবেন।
Leave a Reply