ক্যান্থারিস | একটি আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মাদার টিংচার

হোমিওপ্যাথি ক্যান্থারিস

ক্যান্থারিস | একটি আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মাদার টিংচার

ক্যান্থারিস প্রথম কথা- জ্বালা, আগুনের মত জ্বালা ও প্রদাহ।

বিজ্ঞান অর্থে যদি নির্ধারিত জ্ঞান বা উপলব্ধিকৃত সত্য বুঝায় তাহা হইলে চিকিৎসা জগতে হোমিওপ্যাথিই সর্বোচ্চ আসন দাবী করিবার ক্ষমতা রাখে। কারণ, তাহার মূলমন্ত্র “ সমঃ সমং শময়তি “ যে কিরূপ অব্যর্থ এবং শাশ্বত তাহা পরীক্ষা দ্বারা নিষ্পন্ন হইলেও যদি কেহ অবিশ্বাস করিতে চান  তাহা হইলে বলিবার কি আছে? অবশ্য তাহার সূক্ষ্মমাত্রা আমাদের কাছেও বোধগম্য নহে। কিন্তু রোগশক্তি এবং জীবনীশক্তির মাত্রা সম্বন্ধেই বা আমাদের জ্ঞান কতটুকু?

ক্যান্থারিস প্রথম কথা-

জ্বালা, আগুনে পুড়িয়ে গেলে দগ্ধস্থান যেরূপ জ্বালা করিতে  থাকে ঠিক সেইরূপ জ্বালা। আক্রান্ত   স্থান মাত্রেই জ্বালা। আক্রান্ত স্থান মাত্রেই জ্বালা, প্রদাহযুক্ত স্থানমাত্রেই জ্বালা। জ্বালা অতি ভীষণ। এত জ্বালা অন্য কোনো  ঔষধে নাই। জ্বালার ভীষণতায় রোগী অস্থির হইয়া পড়ে , কাঁদিতে থাকে , পাগলের মত ছটফট করিতে থাকে অথবা অজ্ঞান হইয়া পড়ে। মাথার মধ্যে প্রদাহ হইলে মাথা জ্বলিয়া যাইতে থাকে, মলদ্বারে প্রদাহ হইলে মলদ্বার জ্বলিয়া যাইতে থাকে। যেখানে প্রদাহ সেইখানে জ্বালা, জ্বালা অতি ভীষণ , রোগী কাঁদিয়া ফেলে। শরীরের কোন স্থান সত্য সত্যই  আগুনে পুড়িয়া গেলে খানিকটা গরম জলে কয়েক ফোটা ক্যান্থারিস টিনচার মিশাইয়া পট্টি বাঁধিয়া দিলে এবং তাহার সহিত শক্তিকৃত ক্যান্থারিস সেবন করিলে তৎক্ষণাৎ জ্বালা কমিয়া যায়।

ক্যান্থারিসের দ্বিতীয় কথা- মুত্রকৃচ্ছতার সহিত অসহ্য বেগ।

মুত্রযন্ত্রের উপর ক্যান্থারিসের ক্ষমতা বেশি। শুধু মুত্রযন্ত্র কেন স্ত্রীলোকের জরায়ু এবং ডিম্বকোষের উপরও ইহার ক্ষমতা আছে কিন্তু ক্ষমতা ইহার থাক বা না থাক এবং রোগ যাহা   কিছু হোক না কেন  ক্যান্থারিস হইতে হইলে  মুত্রকৃচ্ছতা বা মুত্রকৃচ্ছ থাকিবেই থাকিবে। এবং এই মুত্র কষ্টের সহিত মুত্র ত্যাগের ক্রমাগত ইচ্ছা বা অসহ্য বেগ থাকিবেই থাকিবে। বেগ এত ভীষণ যে রোগী কিছতেই তাহা সামলাইয়া থাকিতে পারেনা এবং ক্রমাগত  বেগ বা ক্রমাগত ইচ্ছায় সে একেবারে অস্থির হইয়া পড়ে । কিন্তু আবার এত বেগ এবং এত ইচ্ছা  সত্ত্বেও  মুত্র কিছুতেই পরিষ্কার ভাবে নির্গত হয়না , কখনও বা নিষ্ফল  প্রয়াস  , কখনও বা কয়েক ফোটা মাত্র  ; তাহা এত যন্ত্রনা দায়ক যে রোগীর চক্ষু বিগলিত হইয়া আসে তথাপি শান্তি নাই – ক্রমাগত বেগ , ক্রমাগত কুন্থন –প্রাণ যায়। চক্ষু অশ্রুসিক্ত ,প্রত্যেক বিন্দু প্রস্রাব যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ । মুত্রাধারে মুত্র জমিলেও বেগ , না জমিলেও বেগ। রক্ত প্রস্রাব ,প্রস্রাব নালীর মধ্যে অতিশয় চুলকানি , কুটকুট করিতে থাকা । মুত্রাভাব , মুত্রাবরোধ , মূত্র-স্বল্পতা ,মূত্রকৃচ্ছতা । সঙে সঙে অদম্য বেগ ও জ্বালা । মূত্রত্যাগের পূর্বে জ্বালা, মূত্রাধারে জ্বালা, মূত্র কোষে জ্বালা, মূত্র জমিলে জ্বালা মূত্র না জমিলেও জ্বালা। জ্বালার সহিত ক্রমাগত কুন্থন । ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব , রক্ত প্রস্রাব , প্রস্রাব হীনতা ,মুত্রাভাব।

ক্যান্থারিসের তৃতীয় কথা- রক্তস্রাব

ক্যান্থারিসে শরীরের নানা স্থান হইতে অর্থাৎ নাক , মুখ , মলদ্বার , মুত্রদ্বার ইত্যাদি স্থান হইতে প্রায়ই রক্তস্রাব ঘটে। এমন কি ক্যান্থারিস রোগীর লালা রক্তমিশ্রিত হয়, স্বপ্নদোষ হইলে তাহাও রক্ত মিশ্রিত হয় । ক্যান্থারিসে অতি ভীষণ রক্ত আমাশয় দেখা দেয় । মল ত্যাগ কালে মল দ্বার জ্বলিয়া যাইতে থাকে , মল ত্যাগের পরও যন্ত্রণা কম পড়ে না । মলদ্বার ও মূত্রদ্বারে যুগপৎ যন্ত্রণা । ক্রমাগত মলত্যাগের ইচ্ছা । ইচ্ছার সহিত প্রদাহ যুক্ত স্থানে ভীষণ জ্বালা , আগুনের মত জ্বালা।  

Share this post

Comment (1)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *