ত্বকের যত্নের একগুচ্ছ উপায়
অতিরিক্ত শুস্ক ত্বকের জন্য
অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক সহজেই অমসৃন দেখায় ।নিন্মলিখিত উপায়ে শুস্ক ত্বকে উজ্জলতা ফিরিয়ে আনাযায় সহজেই । তরমুজের রস , দুধ , মধু ও আমন্ড(বাদাম) একসঙ্গে বেটে মুখে লাগান। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে অনেক সময়েই ত্বক শুষ্ক ও কর্কশ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে টাটকা কমলালেবুর খোসা রস ও মধু সমপরিমাণ মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে । পাকা কলার খোসা সারা মুখে ঘষে নিন । মিনিট পাচেক রেখে জলের ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন । আলতো করে নরম কাপড়ে মুখ মুছুন ।এতে ত্বকের উপরের আর্দ্র ও আস্তর উঠে যাবে। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা ত্বক উজ্জল করতে কয়েক ফোটা লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন আধঘণ্টা ।
অত্যন্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ
যাদের ত্বক অতি তৈলাক্ত তারা সেবেশাস গ্রন্থির তেল ক্ষরণ কম করতে নিন্মলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন । তুলসী পাতার রসে কয়েকটা কয়েক ফোটা লেবুর রস মধু , আদার রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরিকরুন । এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন মুখ পরিষ্কার করতে । দু চা চামচ মুলতানি মাটি ও একটি লেবুর রস এক সঙ্গে মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে অল্প রগড়ে ধুয়ে ফেলুন । তুলসী পাতা জলে ফুটিয়ে ( পনেরোমিনিট) জলটি ছেকে নিন-সেদ্ধ তুলসী পাতার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ আপেলের রস এবং সামান্য মধু দিয়ে মুখে লাগান । শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন । শসার রস , লেবুর রস সম পরিমাণে মিশিয়ে এটি দিয়েসকালে ও রাতে নিয়মিত মুখ ধৌত করুন । পাতি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে সেই খোসা মূখে ঘষেও পরিষ্কার করতে পারেন ।
ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতেঃ
ত্বকের মসৃণতার আধার হল আর্দ্রতা । আর্দ্রতাহীনতায় ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে । ত্বকের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিতে বোতলবন্দি বাজারে চলতি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন । কয়েকটি ফলের উপরে , পাকা পেঁপে ও কলা এই ফলের যে কোনও একটি চটকে রোজ রাতে শোওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ মূখে মালিশ করুন । আধঘণ্টা রেখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ফেলুন । স্নানের সময় ধুয়ে ফেলুন । স্নানের আগে ঘন আমরস মুখে গলায় , হাতে লাগিয়ে রাখুন আধঘণ্টা । স্নানের সময়ে ধুয়ে ফেলুন । পিচ ফলের ভেতরের অংশ কুরে মসৃন করে মেখে নিন । রাতে শোয়ার আগে বৃত্তাকার মুভমেন্টে মুখে গলায় মালিশ করুন। যাদের ত্বক অতি মাত্রায় শুষ্ক তারা ২০ গ্রাম সেদ্ধ করে এক চামচ আমণ্ড ওয়েল মিশিয়ে মসৃন করে রেখে নিন । এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন আধাঘণ্টা । ঠাণ্ডা ,জলের ঝাপটায় ধুয়ে নিন । অ্যাভোকাডো ফলটিও ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতার মোকাবিলা করে কারণ এটিতে জলীয় পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। একটি অ্যাভোকাডোর শাঁসের সঙ্গে দু টেবিল চামচ বেসন , এক চা চামচ তাজা ক্রিম ও একটি লেবুর রস ও এক চা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে আধঘণ্টা রেখে ডীণ । আধঘণ্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলূন ।

রং ফর্সা করতেঃ
রোদে ঘোরাঘুরি করার পরে অনেক সময়েই মুখে কালচে ছাপ পড়ে যায়। তখন আমরা সাহায্য নিই রাসায়নিক ব্লিচের ।কিন্তু ক্রমাগত রাসায়নিক ব্লিচের ব্যবহারে অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি করে ।অথচ এমন সহজল্ভ্য কমদামি ফল আছে যেগুলোকে বলা যায় “ন্যাচরাল ব্লিচিং এজেন্ট” বা প্রাকৃতিক ব্লিচ । এই ফলগুলির ব্যবহারে মুখের কালচে ছাপ যেমন কমে যাবে তেমনই ক্ষতিকর কোনও পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই। বাড়িতেই করা যায় এমন কিছু উপটানের কথা জানানো হলো যাতে রং ফর্সা হবে । এক কাপ R.S এ একটা লেবূ স্লাইস করে দিন , এক চা চামচ লেবূ স্লাইস করে দিন, এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে এটিকে ফোটান । ছেকে একটি পরিচ্ছন্নবোতলে রেখে দিন । মুখে কালো ছাপ পড়লে তুলো দিয়ে এ লোশনটি লাগিয়ে মিনিট কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন। আমণ্ড বাদাম বেটে সেটি মূখে লাগিয়ে রাখুন আধঘণ্টা ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । লেবুর রস ঠাণ্ডা করে সেটি মূখে লাগান। ব্লিচিং ক্ষমতার জন্য প্রথমে মুখ অল্প জ্বালা করতে পারে ।তাতে ভয় পাবেননা। লেবুর রস ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না। যতক্ষণ না এটি শুকোচ্ছে ধোবেন না। পিচ ফলের খোসা বাটা রং ফর্সা করতে সাহায্য করে । যাদের ত্বক অতিমাত্রায় স্প্রর্শকাতর তারা আঙ্গুরের রস ব্যবহার করতে পারেন নিন্মলিখিত উপায়ে। এক গুচ্ছ আঙ্গুর ভাল করে ধুয়ে নিন। এটিকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে নিন । মোড়ার আগে ফিটকিরি গুড়ো ও নুন ছড়িয়ে দিন। এটিকে মিনিট কুড়ি ব্রেক ক্রুন,গরম ছাইয়েএটির রস নিংড়ে বার করে সেটি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের ছোপ কেটে যাবে । সপ্তাহে একবার করে তরমুজের রস মুখে লাগিয়ে দেখুন রং ফর্সা হবে । রোদে পুড়ে ত্বক কালো হয়ে গেলে স্ট্রবেরি থেঁতো করে মুখে লাগিয়ে রাখুন মিনিট পনেরো উপকার পাবেন।
ত্বকের দাগ মেলাতে
অনেক সময় মুখে মেছতা ( ফেকলস ) বা ব্রণের দাগ হয়। দেখতে খুব খারাপ লাগে । বেশ কয়েকটি ফলে এই দাগ মুছে দেয়ার জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে । নিন্মলিখিত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন । দাগের উপর লেবুর রস লাগান । যতক্ষণ না শুকিয়ে যাচ্ছে ধোবেন না । দু আউন্স পরিমাণ লেবুর রস লাগান। তরমুজের রস দাগ মেলাতে সাহায্য করে। একটা ছোট টুকরো তরমুজের রস নিঙড়ে বার করে সেটি দাঁতের উপর লাগিয়ে রাখুন পনেরো মিনিট পাঁচেক। দাগ মিলে যাবে। আঙ্গুরের রস আঙ্গুলে করে লাগান দাগের উপরে। রস করতে না পারলে একটি আঙ্গুর আধখানা করে , ঠাণ্ডা অবস্থায় দাগের উপর ঘষুন । মিনিট কুড়ি রেখে দিন । ঠাণ্ডা জলের ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন । পেঁপের এনজাইম ত্বকের মেছতার দাগ মেলাতে সাহায্য করে । দু টেবিল চামচ কাঁচা পেঁপের শ্বাস চটকে মুখে লাগান। দশ মিনিট বাদে ধুয়ে ফেলুন । সপ্তাহে চারবার করে মুখে লাগান । মাস দুয়েক ধরে এই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে । মুখে বসন্তের দাগ হলে ডাবের জল দিয়ে মুখ নিয়মিত ধুলে ত্বকে দাগ থাকবে না।
ত্বকের মরা কোষ দূর করুনঃ
অনেক সময়েই ত্বকের উপরের মরা কোষ সরিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে না পারলে ত্বক উজ্জলতা ও মসৃণতা হারায়। ত্বকের উপরের মরা কোষ সারাতে নিন্মলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কমলা লেবুর খোসা গুড়ো জলে মিশিয়ে মুখ, কাঁধ, গলা ও সারা শরীরে মাখুন । জল দিয়ে ধুয়ে নিন। কমলালেবুর খোসার এসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের মরাকোষ সরানোর সঙ্গে সঙ্গে ত্বক করে তুলবে মসৃণ। যাদের ত্বক খুব শুল্ক তারা কমলা লেবুর খোসা গুড়োর সঙে আমণ্ড ( বাদাম ) গূড়ো ভিজে ত্বকের উপর ব্যবহার করুন। যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তারা টমেটোর শাস ভেজা ত্বকের উপর একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করুন।
গরমে বেশিক্ষণ ঘুরলে মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়ে। দিনের শেষে গরমের ক্লান্তি মুছতে বরফ-ঠাণ্ডা জলে আনারসের রস মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে সেই তুলা মুখে কমপ্রেস করে নিন।

ত্বক পরিস্কার করুন নিয়মিতঃ
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলেই ত্বকের সমস্যার আশি ভাগ মিটে যায়। গরমে বেশিক্ষণ ঘুরলে মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়ে। দিনের শেষে গরমের ক্লান্তি মুছতে বরফ-ঠাণ্ডা জলে আনারসের রস মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে নিই। এখানে জানানো হলো বেশ কিছু ফলের যা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ক্লিঞ্জার হিসেবে। কয়েকফোটা লেবুর রস এক টেবিল চা চামচ পরিমাণ কাঁচা দুধে মিশিয়ে এই মিশ্রণটিকে ক্লিঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করুন। এই মিশ্রণে তুলো ভিজিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত। অর্ধেক পাতি লেবু এক কাপ গরম জলে মিশিয়ে নিন। একটি পরিষ্কার নরম কাপড়ের টুকরো ওই জলে ভিজিয়ে বাড়তি জল নিঙড়ে বার করে নিন। ভেজা কাপড়টি দিয়ে আলতো করে মুখ মুছে নিন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত। পাকা পেঁপের শাস সারা মুখে মাখিয়ে নিন, আলতো করে রগড়ে নিন। জলের ঝাপটায় মুখটা ধুয়ে নিন। সাবান দেবেন না। এটি শুষ্ক ত্বকের উপযুক্ত। ছোট টুকরো আনারস মুখে ঘষে নিয়ে, জল দিয়ে ধুয়ে নিন। আনারসের রসও ব্যবহার করতে পারেন ত্বক পরিষ্কার করতে। এটি তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী।
বিশেষ করে গরম কালের জন্যঃ
শীতে যেমন ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া দরকার তেমনই গরমকালে ত্বক তাজা রাখতে দরকার বিশেষ টোনার বা ফ্রেশনার। নিন্মলিখিত উপটান গুলি ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রস ও ভিনিগার জলে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। তুলোয় ভিজিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন। রোদে পোড়া ত্বক থেকে মুক্তি পেতে শসা ব্যবহার করুন। শসা কুরনো পুরো মূখে মেখে শুয়ে থাকুন। কুড়ি মিনিট বাদে একটি পাতলা কাপড়ে মুখ মুছে নিন, জল দিয়ে ধোবেন না। শসার রস ফ্রিজে ঠাণ্ডা করে রেখে দিন। এটিকেও ফ্রেশনার তথা টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বরফ ঠাণ্ডা ডাব, নারকেলের জল ব্যবহার করতে পারেন টোনার হিসেবে। তরমুজের রসে যেহেতু ৯৭ শতাংশ জল আছে তাই এটিও ঠাণ্ডা অবস্থায় ফ্রেশনার হিসেবে ব্যবহার করুন। গ্রীষ্মের নানা রকম ত্বক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলালেবু ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণ গোলাপ জলের সঙ্গে। দিনে দু তিনবার এই মিশ্রণের ঝাপটা নিন। শসার রসে কয়েক ফোটা পুদিনার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে সেটিকেও ব্যবহার করতে পারেন ফ্রেশনার হিসেবে।
ব্রন সারাবেন কিভাবে?
ব্রনের বিড়ম্বনা অল্প বিস্তর ভুগতে হয় সকলকেই, বিশেষত বয়ঃসন্ধির সময়ে। অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যাটি দির্ঘায়িত হয়। সেক্ষেত্রে নিন্মলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করতে পারেন। দু স্লাইস আপেল, টমেটো পাতা ও বার্লি গোলাপ জলে সেদ্ধ করুন। ঘন হলে ডিমের সাদা অংশ দিয়ে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না মোলায়েম হয়ে যায়। লেবুর রস ও চন্দন একসঙ্গে লাগালে ব্রন শুকিয়ে যাবে। কমলালেবুর খোসা জল দিয়ে পাথরে শিলে বেটে তা ব্রণের উপর লাগালেও ব্রণ সেরে যাবে। ব্রণ থেকে ত্বককে বাঁচাতে কালোজিরার তৈল মুখে ঘষুন মিনিট দশেক ধরে। বরফের ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন লেবুর রস ও চন্দন একসঙ্গে লাগালে ব্রণ সেরে যাবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ
নেক সময়েই নিয়মিত যত্নের অভাব, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি কারণে ত্বকের মসৃণতা, উজ্জ্বলতা চলে যায়। সেক্ষেত্রে নিন্মলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করলে নিমেষে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। আপেলের রস, টাটকা দুধের মাঠা ও ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা বাদে প্রথমে দুধ দিয়ে ও পরে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একটি আপেলের রসে, দু-টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে নিয়মিত মুখের ত্বক পরিষ্কার করুন। ত্বকের মসৃণতা বাড়বে।
Leave a Reply