হোমিওপ্যাথি সিমিলিয়া সিমিলিবাস কারেন্টার

হোমিওপ্যাথি Similia Similibus Curentur

হোমিওপ্যাথি সিমিলিয়া সিমিলিবাস কারেন্টার

হোমিওপ্যাথি সিমিলিয়া সিমিলিবাস কারেন্টার। হোমিওপ্যাথি রোগের চিকিৎসা করেনা, রোগীর চিকিৎসা করে। তাহার মতে ভাব এবং ভাষার মধ্যে যে পার্থক্য় সম্বন্ধ, জীব এবং জীবদেহের মধ্যেও ঠিক সেই সম্বন্ধ বিদ্যমান । ভাষার প্রত্যেকটি শব্দ যেমন ভাবাপন্ন না হইয়া পারেনা, দেহের প্রত্যেক অনু পরমাণু  তেমনই আমার ইচ্ছায় রচিত , সঞ্জীবিত এবং পরিচালিত । কিন্তু ইচ্ছা বা স্বভাব সকলের সমান নহে বলিয়া দেহ সকলের সমান নহে-দেহের ত্রুটি বিচ্যুতিও সমান নহে । কাজেই যকৃতের দোষ বলিতে সকলের মধ্যে একই প্রকারের যকৃতের দোষ বা কলেরা বলিতে সকলের মধ্যে একই প্রকারের কলেরা ধারনা করা যুক্তি-বিরুদ্ধ। জীবাণু-বাদ স্বীকার করিয়া লইলেও  দেখা যায় সম পরিমাণ জীবাণু  আমাদের সকলের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দিলে সেই একই কারণে তাহারা সর্বত্র সমান অভিব্যাক্তির পরিচয় দিতে পারে না। এইজন্য হোমিওপ্যাথি প্রত্যেক রোগীকে ব্যক্তিগতভাবে গহন করিবার নির্দেশ দিয়াছে এবং তাহার দেহের স্বাভাবিক রীতি-নীতির ত্রুটি-বিচ্যুতিকে যেমন সে রোগ বলিয়া গণ্য করে না বহির্জগতের কন কিছুকেই তেমনই সে রোগের কারণ বলিয়াও গ্রাহ্য করে না। নিখিল ব্রহ্মাণ্ডে ব্যষ্টির  সহিত সমষ্টি সমসূত্রে গ্রথিত বলিয়া স্বাধীনতা কাহারও ক্ষুণ্ণ হইবার নহে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতাবশত যখনই কেহ তাহা উপেক্ষা করিতে চায় প্রতিক্রিয়া তাহার তাহাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলিয়া দেয়, ফলে সে অসুস্থ পড়ে।

অতঃপর আমরা লক্ষ্য করি, জীবনে যাহা যত সত্য-যত স্বাভাবিক-প্রকৃতির সংসারে তাহা তত সুলভ। তাই মাতৃ অমৃতধারা স্বতঃস্ফর্ত – তাহা আকাশে-বাতাসে আনন্দের অনাহূত সমাবেশ । হোমিওপ্যাথিও এমন একটি সত্য বলিয়া জটিলতা তাহার  কোনখানে নাই । কিন্তু সাধারন লোক তাহার সম্বন্ধে যে ধারনাই করুক না কেন , দুঃখ কেবল সেইখানে যেখানে শিক্ষিত ব্যাক্তি বিশেষত বিজ্ঞানবিদ বলেন ইহা  বিজ্ঞানসম্মত নহে । কিন্তু বিজ্ঞান বলিতে নিশ্চয়ই বিকৃত জ্ঞান বুঝায় না,- আণবিক শক্তির ধ্বংসলীলা নিশ্চয়ই বিজ্ঞানের চরম সার্থকতা নহে। বরং জড়-জগতের দ্বারোদঘাটন করিয়া চেতনের স্বরূপ প্রত্যক্ষ করাই বিজ্ঞানের প্রকৃত ধর্ম । অবশ্য সেই সঙ্গে এই কথাটিও মনে রাখা উচিৎ যে সীমাবদ্ধ শক্তির সাহায্যে অসীমকে আয়ত্ত করা সহজ নহে। ফলে দেখা যায় বড় বড় বৈজ্ঞানিক পরিণত বয়সে পরম দার্শনিক হইয়া  পড়িয়াছেন । বস্তুত বিজ্ঞানের কাছে আজ ধরা পড়িয়াছে এবং পদার্থ অভিন্ন এবং এক অন্যের ভাবান্তর মাত্র । কিন্তু নকল বৈজ্ঞানিকগণের জড়-বিজ্ঞান হোমিওপ্যাথির সূক্ষ্ম তত্বে পৌঁছাইতে পারিতেছে না-বিশেষত তাহার সূক্ষ্ম মাত্রা যত           অনর্থের সৃষ্টি  করিয়াছে। এই সূক্ষ্ম মাত্রার অপর নামই ”জলপড়া”, কারণ জড় বিজ্ঞানের মাপ কাঠিতে তাহা ধরা পড়ে না। কিন্তু জড় বিজ্ঞানের অক্ষমতা না সূক্ষ্ম মাত্রার অপরাধ ? জগতে এমন অনেক কিছু আছে যাহার উপর আলোক ফেলিয়া বিজ্ঞান কিছুই প্রত্যক্ষ করিতে পারে না । তবে কী স্বীকার করিতে হইবে তাহাদের অস্তিত্ব নাই? ক্ষুদ্র একটি শুক্র কীটের সাহায্যে কেমন করিয়া তাঁহার মত একটি বিরাট বৈজ্ঞানিকের উদয় হইল ইহা কি প্রত্যক্ষ করা সম্ভবপর এবং সম্ভবপর না হইলে কি স্বীকার করিতে হইবে তাঁহার মত বৈজ্ঞানিকের কোন অস্তিত্ব নাই? অবশ্য এমন বৈজ্ঞানিকের সংখ্যা দিনদিন হ্রাস পাইবে এবং বিজ্ঞান ও দর্শনের যুগপৎ সম্মেলনে একদিন এই সত্যই  স্বীকৃত হইবে যে মহাত্মা হ্যানিম্যান শুধু  হোমিওপ্যাথিই আবিষ্কার করেন নাই, পরন্তু বিশ্বপ্রকৃতির শক্তিতত্ব প্রথমে তাহারই চক্ষে ধরা পড়িয়াছিল বলিয়া তিনিই ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক এবং তাঁহারই মধ্যে সম্ভবপর হইয়াছিল বিজ্ঞান ও দর্শনের সমন্বয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *